Help Line : 01831910346

Help Line : 01831910346
আপনিও হউন সাংবাদিক ।সাংবাদিকতা শিক্ষার সুযোগ । সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি

সংবাদ সূচনা লেখার কৌশল



সংবাদ সূচনা কী?
সূচনা হলো ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, যা পাঠককে রিপোর্টটি পড়তে আগ্রহী করে তুলে ঘটনার ভেতরে টেনে নেয়। একটি মার্জিত, সংক্ষিপ্ত তীক্ষ- সূচনা পাঠককে শেষাবধি ধরে রাখে। সংবাদ সূচনা কেন ব্যবহার করা হয়? সূচনা একটি সংবাদের মূল কথা সম্পর্কে পাঠককে জানিয়ে দেয়। অর্থাৎ পুরো সংবাদে কী আছে, তা সংক্ষেপে পাঠককে বলে দেয়। সাংবাদিককে অত্যন্ত দ্রুত একটি ঘটনার মূল অংশ পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে হয়। কারণ কর্মব্যস্ত পাঠক প্রথমেই কোনো ঘটনার মূল বিষয়টি জানতে চান। আর এজন্যই তরতাজা সংবাদের ক্ষেত্রে উল্টো পিরামিড কাঠামোর আবির্ভাব ও এর পুরো ভাগে সূচনার অবস্থান।
সূচনা লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে- সূচনাটি যাতে অনেক বড় না হয়ে যায়। সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় সূচনা পাঠকের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষণ করে। সাধারণত ১৯ থেকে ২৫ শব্দের মধ্যে সূচনা লেখা যেতে পারে। দীর্ঘ সূচনা পাঠকের মনোযোগ নষ্ট করে ফেলতে পারে।
সংবাদ সূচনার কাজ
সংবাদ সূচনা সংবাদ কাহিনীর শুরুতেই মূল খবরটি পাঠককে জানিয়ে দেয়। এতে পাঠককে আকৃষ্ট বা প্রলুব্ধ করা হয়; যাতে তিনি পুরো খবরটি পড়তে আগ্রহী হন। বিবিসির প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত আতাউস সামাদ বলেছেন, ‘সংবাদপত্রের পাঠকরা সাধারণত প্রত্যেকটি খবর খুঁটিয়ে পড়েন না। তারা শিরোনাম ও সংবাদ সূচনা পড়ে দিনের খবর সম্পর্কে মোটামুটি তাদের কৌতূহল মিটিয়ে নেন এবং এই চোখ বুলানোর ভিত্তিতে কিছু খবর পুরোটা পড়েন। কাজেই সংবাদ সূচনা এমনভাবে ক্সতরি করতে হয়; যাতে (১) পাঠকের সংবাদ সম্পর্কিত প্রাথমিক কৌতূহল নিবৃত্ত হয় এবং (২) উপরোক্ত মূল্যায়নে সহায়ক হয়।’
থমসন ফাউন্ডেশনের মতে, সংবাদ সূচনা লেখার গ্রহণযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা সম্ভব। এগুলো হচ্ছে-
 সংবাদ সূচনা ওই সংবাদ কাহিনীর জন্য যথাযথ হওয়া উচিত।
 সংবাদ সূচনার উচিত সংবাদের বাকি অংশ পড়ার জন্য পাঠককে আগ্রহী করে তোলা।
 স্বাভাবিক অবস্থায় সংবাদ সূচনাকে ছোট রাখা উচিত।
 স্বাভাবিক অবস্থায় সংবাদ সূচনা হওয়া উচিত সংবাদ কাহিনীর মূল বা প্রধান প্রধান পয়েন্টভিত্তিক।
থমসন ফাউন্ডেশন এর ব্যাখ্যায় বলেছে, সম্ভাব্য সব ধরনের সংবাদ সূচনা কোনো একটি সংবাদ কাহিনীর জন্য ঠিক হবে না। খবরটির ওপরই নির্ভর করবে সেটির কোন ধরনের সংবাদ সূচনা লিখতে হবে। সংবাদ সূচনার মাধ্যমে রিপোর্টার তার সংবাদ কাহিনীর বাকি অংশটুকু পড়তে পাঠককে আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে থাকেন।
সংবাদ সূচনার কাজ হচ্ছে
 পুরো কাহিনীর সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া;
 পুরো খবরটির প্রতি পাঠককে আকৃষ্ট করা;
 সংবাদ বিবরণীর মূল সুরটি পাঠককে ধরিয়ে দেয়া;
 ব্যস্ত পাঠকের সময় বাঁচানো;
 দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়- কোনটি বাদ দেয়া হবে, আর কোনটি ছাপা হবে।
সংবাদ শিরোনাম প্রথমে পাঠককে আকৃষ্ট করে সংবাদটির সূচনা পড়ার জন্য। আর সংবাদ সূচনার কাজ হচ্ছে পাঠকের সেই আগ্রহকে ধরে রেখে, আকৃষ্ট করে কিংবা সেই আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়া; যাতে পাঠক পুরো খবরটি পড়েন। এ কারণেই সংবাদ সূচনা আকর্ষণীয় হলে পাঠক তা পড়েন, আর আকর্ষণীয় না হলে তিনি অন্য কোনো খবর পড়া শুরু করেন কিংবা অন্য কোনো কাজে চলে যান। সংবাদ সূচনাকে অবশ্যই সংক্ষিপ্ত হতে হবে।
ছোট কোনো কিছু পড়া সহজ; ক্লান্ত হন না পাঠক। ছোট হওয়ার কারণে তা পাঠকের কাছে সহজবোধ্য হয়। সংবাদ কাহিনীর মূল তথ্যের ভিত্তিতে লেখার কারণে পাঠক মোক্ষম তথ্যটুকু শুরুতেই পেয়ে যান। রিপোর্টার যে সংবাদ লেখেন, তার নিজের হাউসেই তার মূল্যায়নের প্রয়োজন হয় সেটি কীভাবে পরিবেশিত হবে,
সে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। তাই রিপোর্টের শুরুতেই সংবাদ সূচনা পড়েই ওই সংবাদপত্রের বার্তা সম্পাদক ও তার সহকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনÑ সংবাদটি আদৌ ছাপা হবে কিনা; হলে কোথায় ছাপা হবে, কী আকারে ছাপা হবে, কোন পৃষ্ঠায় ছাপা হবে সে বিষয়ে।
সূচনা লেখার প্রথাগত একটি নিয়ম হলো সূচনায় ছয়টি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে নিতে হয়। এ প্রশ্নগুলো হলো কী, কে, কোথায়, কেন, কখন এবং কীভাবে। এ প্রশ্নগুলোকে সহজে বলা হয় ‘ষড়-ক’। কোনো সংবাদের সূচনা লেখার সময় এ প্রশ্নগুলোর উত্তর সাজিয়ে উপস্থাপন করলেই একটি ভালো সূচনা লেখা যায়।
সারা বিশ্বে সংবাদপত্রগুলোয় সংবাদ সূচনা লেখার কমবেশি ‘ষড়-ক’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই ‘ষড়-ক’ হচ্ছে পাঠকের সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি; অর্থাৎ কী, কে, কখন, কোথায়, কেন ও কীভাবে- এ ছয়টি জিজ্ঞাসার সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েই সংক্ষেপে সংবাদটির মূল মূল তথ্য পাঠককে সূচনার মধ্যে দিয়ে জানিয়ে দেয়া সম্ভব।
‘কী সংবাদ সূচনা’ (What Intro)
সংবাদ মূল্য অনুযায়ী ঘটনাটি কী, অর্থাৎ ঘটনার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পেলে সেটি হবে ‘কী সংবাদ সূচনা।যেমনÑ ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।’
‘কেন সংবাদ সূচনা’ (Why Intro)
ঘটনার কারণ গুরুত্ব পেলে ‘কেন সংবাদ সূচনা’ করা যেতে পারে। যেমনÑ ‘অবৈধ পণ্য আমদানি ও নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে উত্তর কোরীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে সরকার।’
‘কোথায় সংবাদ সূচনা’ (Where Intro)
সংবাদ ঘটনার স্থান গুরুত্ব পেলে ‘কোথায় সংবাদ সূচনা’ লেখা যেতে পারে। যেমন- ‘যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে গেল শনিবার রাতে আবারও সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে অন্তত সাতজন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন। নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে সন্দেহভাজন তিন হামলাকারীও নিহত হয়েছেন।’
‘কীভাবে সংবাদ সূচনা’ (How Intro)
সংবাদ ঘটনাটি কেমন করে ঘটল? সংবাদ সূচনায় পাঠকের এমন জিজ্ঞাসা বা উত্তর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেলে সেটিই ‘কীভাবে সংবাদ সূচনা’। ঘটনার পরিবেশ-পরিস্থিতি-মেজাজ মূল্যায়ন করে ও নানা মাত্রার বিচিত্র ধরনের সংবাদ সূচনা লেখা যেতে পারে। যেমনÑ ‘এহতেশামুল হক ভোলার সরবরাহ করা পিস্তল দিয়েই পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।’
সংবাদ সূচনা লেখার কৌশল
সংবাদের শুরুতে আকর্ষণ সৃষ্টি করাই রিপোর্টারের প্রধান দায়িত্ব। সংবাদ সূচনা এমনভাবে লিখতে হয়; যাতে পাঠকের দৃষ্টি টেনে আনা যায়। পাঠক পুরো খবর না পড়েই সংবাদের মূল কাহিনী বুঝতে সক্ষম হন। তাই লিড বা ইন্ট্রো বা সংবাদ সূচনা ভালোভাবে লেখার দক্ষতা অর্জন একজন রিপোর্টারের জন্য বেশ বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
মূল সংবাদ কাহিনীর সঙ্গে সংবাদ সূচনার সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। M. V. Charnley e বলেছেন, The one idea lead sentence is almost certain to be more effective than the multi idea lead. অর্থাৎ প্রত্যেক সংবাদ কাহিনীরই একটি কেন্দ্রীয় ভাবনা থাকে, আর ওই কেন্দ্রীয় ভাবনাই হবে সংবাদ সূচনার বিষয়বস্তু। পাঠক সংবাদ পড়ার সময় ছয়টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। এগুলো হচ্ছে- কে, কী, কখন, কোথায়, কেন ও কেমন। সংক্ষেপে এগুলোকে ‘ষড়-ক’ বলা হয়। ইংরেজিতে যাকে বলে Five ‘W’ one ‘H’ (What, When, Where, Why and Why)..
 সংবাদ সূচনা লেখার একটি ভালো নিয়ম হচ্ছে ‘যেমনভাবে বলা, তেমনভাবে লেখার’ নীতি অনুসরণ করা;
 সংবাদ সূচনাটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের অনুকূল হতে হবে;
 সংবাদ সূচনাটি হতে হবে আকর্ষণীয়- যাতে তা পড়েই পাঠক রিপোর্টের বাকি অংশ পড়তে আগ্রহী ও উৎসাহী হন;
 সংবাদ শিরোনামের মতো সংবাদ সূচনা সংবাদের বিজ্ঞাপনস্বরূপ;
 বর্ণনা বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নয়, সংবাদ সূচনা হবে ঘটনার সংক্ষিপ্ত সার এবং তা হবে প্রতিবেদনের মূল তথ্যনির্ভর;
 সূচনা যত কম শব্দে লেখা যায়, ততই ভালো;
 সংবাদ সূচনা হবে সরল, সাবলীল ও তথ্যসমৃদ্ধ;
 অল্প কথায় বেশি ভাব প্রকাশের উপযোগী শব্দ ও বাক্য নির্বাচন করে সংবাদ সূচনা লেখার চেষ্টা করতে হবে;
 সংবাদ সূচনায় যথাসম্ভব সবসময় ‘ষড়-ক’, ইংরেজিতে যাকে বলে Five ‘W’ one ‘H’ তুলে ধরতে
হবে।
তবে ‘ষড়-ক’-এর সবক’টিকেই সংবাদ সূচনায় উল্লেখ করতে গেলে বড় হয়ে যেতে পারে অনেক সময়। তাই কেন এবং কেমন- এ দুইটি প্রশ্নের উত্তর সংবাদ কাহিনীতে উল্লেখ করলেও চলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সংবাদ সূচনা যেন সবসময়ই তার আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে রিপোর্টারকে।
সূচনা লেখার প্রথাগত একটি নিয়ম হলো সূচনায় ছয়টি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে নিতে হয়। এ প্রশ্নগুলো হলো কী, কে, কোথায়, কেন, কখন এবং কীভাবে। এ প্রশ্নগুলোকে সহজে বলা হয় ‘ষড়-ক’। কোনো সংবাদের সূচনা লেখার সময় এ প্রশ্নগুলোর উত্তর সাজিয়ে উপস্থাপন করলেই একটি ভালো সূচনা লেখা যায়।
সারা বিশ্বে সংবাদপত্রগুলোয় সংবাদ সূচনা লেখার কমবেশি ‘ষড়-ক’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই ‘ষড়-ক’ হচ্ছে পাঠকের সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি; অর্থাৎ কী, কে, কখন, কোথায়, কেন ও কীভাবে- এ ছয়টি জিজ্ঞাসার সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েই সংক্ষেপে সংবাদটির মূল মূল তথ্য পাঠককে সূচনার মধ্যে দিয়ে জানিয়ে দেয়া সম্ভব।
‘কে সংবাদ সূচনা’ (Who Intro)
সংবাদ মূল্য বিবেচনায় ঘটনার ব্যক্তির ওপর যখন বেশি জোর দেয়া হয়, তখন তাকে ‘কে সংবাদ সূচনা’ বলা হয়। যেমনÑ ‘হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে ভারতে পলাতক বিতর্কিত শিল্পপতি রাগিব আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ কিংবা ‘নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছেন ৮৪ বছর বয়সের জ্যেষ্ঠ নাগরিক শিক্ষক সুরথ চন্দ্র দে।’
‘১. সারমর্ম বা সারাংশ সূচনা (Summary Intro)
এ ধরনের সংবাদ সূচনায় ঘটনার মূল বিষয় সংবাদের শুরুতে সারাংশ আকারে স্থান পায়। সংবাদপত্রে বহুল ব্যবহৃত এ ধরনের সংবাদ সূচনায় সাধারণত ‘ষড়-ক’-এর উত্তরগুলো তুলে ধরে পাঠককে সংবাদের সামগ্রিক দিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়। এ ধরনের সূচনায় পুরো সংবাদটির মূল তথ্য সহজেই বোঝা যায়। অধিকাংশ সংবাদ সূচনা এভাবে লেখা হয়। যেমনÑ রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে দুইবার ফাঁসির (মৃত্যুদ-) আদেশ দিয়েছেন আদালত।
২. পটভূমিমূলক সংবাদ (Background Intro)
সংবাদ গুরুত্বের মানদ-ে সংবাদের পেছনের সংবাদ, অর্থাৎ ঘটনার নেপথ্যের তথ্য তুলে ধরে সংবাদের যে সূচনা করা হয়, তাকেই বলা হয় পটভূমিমূলক সংবাদ সূচনা। অনেক সময় নেপথ্য বা পূর্ব ঘটনার জেরেই পরবর্তী সংবাদ ঘটনা সংঘটিত হয়। এরূপ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংবাদের গুরুত্বের পটভূমিমূলক ও কার্যকারণধর্মী তথ্য ধরে সংবাদ সূচনা ক্সতরি করতে হয়। যেমনÑ ‘উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকার সাত খুন মামলার প্রধান আসামি সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনকে ফেরত পেল বাংলাদেশ।’
৩. বর্ণনামূলক সূচনা (Descriptive Intro)
যে সূচনায় কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে রিপোর্ট তুলে ধরতে গিয়ে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির বর্ণনা দেয়া হয় এবং দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ ও স্বাদÑ এসবের আলোকে পাঠককে ঘটনাস্থলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, সে ধরনের সংবাদ সূচনাকে বর্ণনামূলক সূচনা বলা হয়। সংবাদের বিশেষত্ব বা মেজাজের জন্য পাঠকের তৃপ্তি, সম্ভাব্য আগ্রহÑ এসব বিবেচনা করে যেখানে যেমন বর্ণনা প্রয়োজন, সেখানে তেমন বর্ণনামূলক সূচনা ব্যবহার করা উচিত। এ ধরনের সূচনা কিছুটা দীর্ঘ হয়। এ সূচনা সাধারণত বড় কোনো ঘটনার খবরের সঙ্গে পরিপূরক খবর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমনÑ ‘প্রথম দিনেই ক্রিকেটের টিকিট নিয়ে রাজধানীতে তুলকালাম কা- ঘটেছে। টিকিট না পেয়ে ব্যাংকে হামলা, ভাংচুর, লাইন দেয়া নিয়ে ধাক্কাধাক্কি, পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ এবং পাশাপাশি নয়া কালোবাজারিদের সিন্ডিকেট অধিকাংশ টিকিট করায়ত্ত করার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর সংশ্লিষ্ট আইএফআইসির ব্যাংকের শাখাগুলো হিমশিম খায়।’
৪. উদ্ধৃতিমূলক সূচনা (Quotation Intro)
সাধারণত কারও বক্তব্য হুবহু উল্লেখ করে এ ধরনের সূচনা করা হয়। আমাদের সংবাদপত্রে উদ্ধৃতিসহ প্রায়ই সংবাদ সূচনা ক্সতরি করা হয়ে থাকে। জোরালো কোনো বক্তব্যের অনুকূলে বিতর্কিত, শ্লেষ বা বিবৃতিনির্ভর কোনো উক্তি বা মন্তব্য, যা বিশেষ পরিস্থিতিতে সময়ের কথা বলে, অনুরূপ ক্ষেত্রে উদ্ধৃতিমূলক সূচনা ক্সতরি করা যেতে পারে। সংকটাপন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের সরাসরি উদ্ধৃতি সংবাদের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। যেমনÑ ‘আমি কী বলব? বুশরা কি কখনও ছিল? আমার তো মনে হয়, বুশরা নামে কখনও কেউ ছিলই না’, কথাগুলো রুশদানিয়া ইসলাম বুশরার মা লায়লা ইসলামের।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটা খুন হয়ে ঘরে পড়ে রইল, মামলা হলো। আমি ১৬ বছর ধরে আদালতে আদালতে ঘুরলাম। জজকোর্ট, হাইকোর্ট সাজা দিলেন। আজ জানলাম, সর্বোচ্চ আদালতে তারা খালাস পেয়েছে। তাহলে বুশরাকে খুন করল কে?’ মা-বাবার একমাত্র সন্তান বুশরা ২০০০ সালের ১ জুলাই খুন হন। খুনের আগে তিনি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছিলেন বলে পুলিশের মামলায় বলা আছে।
৫. বুলেট সংবাদ সূচনা (Bullet Intro)
এ ধরনের সূচনায় সংক্ষিপ্ত কোনো বাক্য দিয়ে সরাসরি কোনো তথ্য পরিবেশন করা হয়। দর্শকের মনে এটি বুলেটের মতো বিদ্ধ হয় বলে এই নামকরণ। যেমনÑ
 ‘হুমায়ূন আহমেদ আর নেই’।
 ‘কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো নেই’।
৬. সংলাপ সূচনা (Dialogue Intro)
যে সূচনায় কথোপকথনের ভঙ্গিতে একটি খবরের মূল বক্তব্য উপস্থাপিত হয়, তাকে সংলাপ সূচনা বলে। সাধারণত নাটকীয়তা ক্সতরি করে সংবাদে ক্সবচিত্র্য আনা। ‘বন্দর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সরকারের নীতি সঠিক নয়’, বললেন ক্যাপ্টেন হামিদ। ‘আপনাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই’, বললেন প্রধানমন্ত্রী।
৭. প্রশ্নমূলক সূচনা (Question Intro)
কোনো বিতর্কিত বিষয় বা রহস্যজনক প্রশ্ন কিংবা কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করে কখনও কখনও সংবাদ সূচনায় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। যেমনÑ ‘কলম্বোর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আজ নিজ ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামছেন তিলকারতেœ দিলশান। শেষ বেলায় কি ব্যাটিং ঝলক আরেকবার দেখাতে
পারবেন?’
৮. স্ট্যাকাটো সংবাদ সূচনা (Staccato Intro)
এ ধরনের সূচনা পূর্ণাঙ্গ বাক্য ব্যবহার না করে টুকরো টুকরো শব্দ ব্যবহার করে পুরো পরিস্থিতিকে তুলে ধরা হয়; যাতে পাঠক কল্পনায় বিষয়টি দেখতে পারেন। এতে নাটকীয়তা থাকে। যেমনÑ ‘রাত আড়াইটা। গভীর ঘুমে পাইকপাড়াবাসী। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। ঘুম ভাঙল মুহুর্মুহু গুলির শব্দে। এত গোলাগুলি এলাকার কেউ আগে দেখেনি, শোনেনি।’
৯. অলংকরণ সংবাদ সূচনা (Figurative Intro)
এ ধরনের সূচনায় ভাষার কিছু অলংকরণ থাকে। ঘটনাটি কী বলার পরিবর্তে কে কী করেছেন, সেভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। যেমনÑ ‘বিদ্যুৎ নিয়ে সারা দেশে অসন্তোষের ইতি টানতে প্রধানমন্ত্রী আজ জ্বালানিমন্ত্রীকে নীরবে বরখাস্ত করে দফতরবিহীন মন্ত্রী বানিয়েছেন।’
১০. বিলম্বিত সংবাদ সূচনা (Delayed Intro)
কখনও এমন হয়, সরাসরি মোক্ষম কথাটি শুরুতে বলে সুবিধা করা যায় না। পাঠক ভালোভাবে নেয় না। তাই ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে হয়। এমন বক্তব্য দিয়ে শুরু করা হয়, যা পাঠকের মন কেড়ে নেয়। পাঠকের কৌতূহল বাড়িয়ে দেয়াই লক্ষ্য। ধরুন, একটি কলেজের হোস্টেলে সিট সংকট দেখা দিয়েছে।
সারমর্ম সংবাদ সূচনা লিখলে হতো : ‘বরিশাল কলেজের মেয়েদের হোস্টেলে ২৫০ জনের সিট থাকলেও সেখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছে ৪০০ ছাত্রী। কোনো কোনো রুমে ১০ জনকেও ঠাঁই নিতে হচ্ছে।’
বিলম্বিত সংবাদ সূচনা লিখলে এটি হতো এরকম : ‘এক চিলতে ঘর। থাকার বিছানা একটি। কিন্তু ১০ জনের
মধ্যে ভাগাভাগি।’
১১. অভিনব সংবাদ সূচনা (Oddity or Freak Intro)
ব্যতিক্রমী বা অভিনব কথা দিয়ে শুরু হয় এ ধরনের সূচনা। পাঠককে আকৃষ্ট করতে বিরল কোনো বিষয় তুলে ধরা হয়। যেমনÑ ‘জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া : নিরিবিলি ঘর-সংসার করতে চান? ইয়োগিয়াকার্তা শহরে স্ত্রীসহ সুপরিসর দুই বেডরুমের বাড়ি পাচ্ছেন মাত্র ইন্দোনেশীয় ৯৯৯ মিলিয়ন ডলারে। না, কৌতুক নয়! সত্যিই শহরটির প্লেম্যান এলাকার বাসিন্দা বিধবা উইনা লিয়া (৪০) তার বাড়ির ক্রেতাকে আইন সংগতভাবেই বিয়ে করতে চান।
(র‌্যাপলার ডটকম : ১০ মার্চ, ২০১৫)।’
সূত্র: মুক্তপাঠ।

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.