মফস্বল সাংবাদিকরা কি সংবাদদাতা / সাংবাদিক?
ঢাকার বাহিরে যারা সাংবদিকতা পেশায় কাজ করছেন তারা কি সংবাদদাতা নাকি সাংবাদিক এ নিয়ে মফস্বল সাংবাদিকরা কথিপয় কিছু মানুষের সমালোচনার শিকার হন। তখন ওই প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। সিনিয়র অনেক সাংবাদিকও এবিষয়টি নিয়ে দুটানার মধ্যে থাকে। মফস্বলে থেকে যারা মিডিয়ায় কাজ করে তারা কি সত্যিই সাংবাদিক। শুধু তাই নয় মফস্বল থেকে বের হওয়া অনেক পত্রিকার সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক পদ নিয়ে যারা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন তারাও নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে অনেক সময় সমালোচনার শিকার হতে হয়। এ বৈষম্য কবে দূর হবে নাকি আদৌ ধোঁয়াশাই থেকে যাবে তা নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা জরুরী।
যদি কোনো মিডিয়ায় ঢাকায় কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক ও সম্পাদক লেবেলের ব্যক্তিদেরকেই শুধু সাংবাদিক বলা হয় তহলে মফস্বলের হাজার হাজার সংবাদ কর্মীদেরকে কি বলা হয়। সংবাদদাতা না সাংবাদিক?
যদি স্টাফ করেসপন্ডেন্ট/ বিট রিপোর্টার, রিপোর্টার, নিজস্ব প্রতিবেদক, নিজস্ব সংবাদদাতা, মফস্বল করেসপন্ডেন্ট, মফস্বল সংবাদদাতা, রিপোর্টার, করেসপন্ডেন্ট, গ্রামীণ প্রতেিবদক, গ্রামীণ সংবাদদাতা/ প্রতিনিধি বিভিন্ন নামে মিডিয়ার ক্ষেত্রে অবহিত করা হয়। মফস্বলের সংবাদকর্মীদের নিয়ে পিআইবি যখন বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ দেয় তখন ওই ব্যানারে ঠিই লেখা থাকে সাংবাদিক বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ। তখন লেখা হয়না কেন প্রতিনিধি বা সংবাদদাতা বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ।
আসলেই কি রির্পোটার কিংবা সংবাদদাতারাই সাংবাদিক নয়? তাহলে মফস্বল সংবাদদাতা বা সংবাদকর্মীরা সাংবাদিক পদবী লাগালে দোষের কোথায়, মফস্বলের সাংবাদিকদের নিয়ে চারিদিকে এত বৈষম্য কেন? জার্নালিজম এর উপর ডিগ্রী যাদের আছে তাদেরকেই যদি সাংবাদিক বলা হয় তাহলে যারা ডিগ্রী ছাড়া অনেক বড় বড় মিডিয়ায় কর্মরত সম্পাদক, স্টাফ রিপোর্টারসহ অন্যান্য পদবী নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদেরকে কি বলব। তাদেরকেতো একবাক্যে সাংবাদিক হিসেবে সবাই মেনে নেই। কিন্তু মফস্বলের ক্ষেত্রে এমনটা কেন হবে এত বিভাজন কিশের হয়ত জানা নেই।
সাংবাদিকতার উপর পড়াশোনা তো সেই দিনের ঘটনা। সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকের ইতিহাস সৃষ্টি লগ্ন থেকে বিশেষ করে আদিম যুগে চিত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকা শুরু হয়।
প্রকৃত অর্থে সংবাদদাতা, প্রতিবেদক, করেসপন্ডেট, রির্পোটার যাই বলিনা কেন সার্বিকভাবে তাদের সবাইকে সাংবাদিক বলেই সম্বোধন করা হয়। নিশ্চয় কাউকে সংবাদদাতা (করেসপন্ডেট) বা নিজস্ব প্রতিবেদক (স্টাফ করেসপন্ডেট) বলে ডাকা হয় না। শুধু মিডিয়ায় কর্মরত ব্যক্তিদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদবী ব্যবহার করা হয়। কোনো সরকারী বা বেসরকারী দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানে সবার পদবী এক হয় না কখনো। পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সবাই পুলিশ তারপরও আইজি, ডিআইজি এসপি, ওসি, এসআই, এএসআই, কনস্টেবল পর্যন্ত বিভিন্ন পদবী ভাগ থাকলেও এক কথায় সবাই পুলিশ, সেনাবাহিনীতে সবাই আর্মি, এছাড়াও বিডিআর, র্যাব, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক. ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এডভোকেট ইত্যাদি ছাড়াও অনেক দপ্তর আছে সার্বিকভাবে একই পদবী ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একজন আইজি দিয়ে পুলিশ বাহিনী চলবেনা, একজন সম্পাদক দিয়ে সংবাদপত্র চলবেনা। এটি একটি টিম ওয়ার্ক, একটি টিম বা দলে টিম লিডার বা দল নেতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। দলনেতা সম্বণয় করে পুরো বিষয়টি। তবে কাজ করে থাকেন দলে অর্ন্তভুক্ত সকল সদস্যরাই।
আমরা এটাই জেনে আসছি বা আমাদের ধারণা ঢাকা রাজধানীতে কর্মরত সংবাদকমীরাই জাতীয় সংবাদিক আর মফস্বেলে যারা রয়েছেন তারা লোকাল সাংবাদিক। এ কথা সত্য জাতীয় পর্যায় বলতে ঢাকাকেই বুঝাই নি:সন্দেহে। তবে একটি সংবাদপত্র রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় সেটা ঢাকার জন্য লোকাল, জেলা বা উপজেলা থেকে প্রকাশিত হলে সেটা ওই সংবাদপত্রের জন্য লোকাল এরিয়া। মফস্বলের একটি পত্রকায়ও জাতীয় পর্যায়ে থেকে কাজ করা সম্বব। তবে অর্থের অভাবে মফস্বলের সংবাদপত্র গুলোর ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে উঠেনা। তবে মফস্বলের অনেক সংবাদপত্রই বিভিন্ন সংবাদ এজন্সি থেকে জাতীয় সংবাদ অর্থের বিনিময়ে পেয়ে থাকেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের লোকাল এরিয়ায় যারা কাজ করেন তারা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লোকল এরিয়ার বাহিরে যারা তার প্রতিনিধি বা সংবাদদাতা। অনেকক্ষেত্রে বড় মিডিয়া গুলো একটা বিশাল এলাকার জন্য নির্ধারিত স্টাফ করেসপন্ডেট দিয়ে থাকেন। মফস্বল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট থাকে ওই লোকাল এরিয়ার জন্য।
সংবাদপত্রে শুধুমাত্র লোকাল এড়িয়ায় যারা কাজ করেন তারা হচ্ছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লোকাল এরিয়ার বাহিরে যারা কাজ করেন তারা করেসপন্ডেন্ট (সংবাদদাতা বা প্রতিনিধি) বা ব্যুরো চিফ হিসেবে কাজ করেন। বেশিরভাগ সংবাদপত্রই ঢাকা থেকে প্রকাশিত হওয়ায় মফস্বলের ক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলা প্রতিনিধি, সংবাদদাতা, প্রতিবেদক হিসেবে বিভিন্ন মিডিয়া বিভিন্ন পদবী ব্যবহার করা হয়। এটা শুধু ওই সংবাদমাধ্যমে একটি অফিসিয়াল পরিচয় বহন করে ওই সংবাদিকের। মূলত মিডিয়ায় কর্মরত সকল সংবাদকর্মীই করেসপন্ডেন্ট-এর অর্থ প্রতিবেদক, সংবাদদাতা বা প্রতিনিধি (রিপ্রেজেনটিভ)। বাংলায় অনেক সংবাদপত্রে প্রতিনিধি লিখলেও কোন সংাদপত্র রিপ্রেজেনটিভ না বলে করেসপন্ডেন্টই বলে থাকেন। মূলকথা যিনি সংবাদ বিশারদ তিনিই সংবাদদাতা বা সাংবাদিক। আবার তাদেরকে গোয়েন্দাও বলা হয়ে থাকে।
এবার আসি একজন সাংবাদিকের যোগ্যতা কি? বা কতটুকু পড়াশোনা থাকলে একজন সাংবাদিক হিসেবে সমাজে পরিচয় দিতে পারবে। এই প্রশ্নে যদি ধরে নেই যে সাংবাদিকাতা বিষয়ে অর্নাস বা মাস্টার্স ডিগ্রী পাশ করে প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন করলেই সমাজে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়া অত্যন্ত সহজ হবে এটা নিতান্তই কটি ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ সাংবাদিকতা বিষয়ে ইউনিভাসির্টিতে পড়াশোন চালু হওয়ার অনেক আগে থেকেই সাংবাদিকতা শুরু হয়েছিল। আদিম যুগের সাংবাদিকরা চিত্রের মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করত। তারাও সাংবাদিক ছিল।
প্রশ্ন হলো, যখন জার্নালিজম বিষয়ে কোন পড়াশোনা ছিলনা তখন যারা ডিগ্রী ছাড়া সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিল তাদেরকে তাহলে সাংবাদিক বলা যাবেনা। এ প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়া খুব কঠিন। যারা বর্তমানে পত্রিকা সম্পাদনা করে তাদের মধ্যেই কতজন পাওয়া যাবে সাংবাদিকাতায় অর্নাস বা মাস্টার্স ডিগ্রীধারী। আবার অনেকই আছেন যারা সাংবাদিকতা বিষয়ে অর্নাস মাস্টার্স করে আধুনিক সাংবাদিকতা বিষয়ে অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করেছেন। তবে তারা কোন মিডিয়ায় কাজ করেনা বা সংবাদ তৈরি করেনা তাহলে কি তারা সাংবাদিক। তাদেরকে কি সাংবাদিক হিসেবে ডাকা যাবে বা কেউ ডাকবে। অবশ্যই না! কারণ সার্টিফিকেট অর্জন করে ঘরে বসে থাকলে সাংবাদিক হওয়া যায়না সংবাদ তৈরি বা সংবাদ প্রচার করাই হলো সাংবাদিকতার প্রথম শর্ত।
লেখকÑএম.আর রুবেল
নাট্যকর্মী ও ভৈরব প্রতিনিধি-বাংলার চোখ,
সাবেক বার্তা ও নির্বাহী সম্পাদক-দৈনিক গৃহকোণ, ভৈরব।
No comments